ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং (দশম অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা - | NCTB BOOK
50
50

ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং, সিএসসি পবিত্র ক্রুশ সংঘের একজন যাজক ছিলেন। যীশুর নামে জীবন উৎসর্গ করে মা বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, আপন দেশ-সবকিছু ত্যাগ করে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ববঙ্গে) আগমন করেন। যাজকীয় সেবাকাজের পাশাপাশি তিনি সমাজকর্মের মধ্য দিয়ে মানবসেবার মাধ্যমে ঈশ্বরকে আপন করে পেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক এবং কারিতাস, প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এদেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে তিনি এদেশের মাটিতেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং এদেশের মাটির কোলেই চিরনিদ্রায় নিদ্রিত রয়েছেন। আমরা এখানে ক্ষুদ্র পরিসরে তাঁর সম্পর্কে কিছু জানব এবং তাঁর জীবন ও কাজের জন্য ঈশ্বরের প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানাব। এর পাশাপাশি আমরা দরিদ্র ও অভাবী মানুষের সেবাকাজে উদ্বুদ্ধ হব।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-
  • ফাদার ইয়াং-এর শৈশব ও শিক্ষাজীবন বর্ণনা করতে পারব।
  • ঋণদান সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠায় ফাদার ইয়াং-এর ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • দারিদ্র্য বিমোচনে ফাদার ইয়াং-এর অবদান বর্ণনা করতে পারব।
  • সমাজের অবহেলিত ও দরিদ্র মানুষের প্রতি মমত্ববোধ দেখাব।
Content added By

শৈশব ও শিক্ষাজীবন (পাঠ ১)

27
27

ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দের ৩ জুন তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ডানিয়েল ইয়াং ও মায়ের নাম মেরি জেনিংস। তাঁদের উভয়েরই পূর্বপুরুষদের আদি বাসস্থান ছিল আয়ারল্যান্ডে। বহু আগে তাঁরা অধিকতর সুখের সন্ধানে আয়ারল্যান্ড ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। চার্লসদের পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন ১৬২৫ খ্রীষ্টাব্দে। আর মেরি জেনিংসদের পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন এরও কিছুকাল পরে। 'ইয়াং' শব্দের অর্থ হচ্ছে তরুণ। কাজেই ইয়াংদের পরিবারের আদর্শবাণী হচ্ছে 'সদা তরুণ' থাকা অর্থাৎ সব সময় তরুণ থাকা। ফাদার ইয়াং তাঁর সারা জীবনের কথায় ও কাজে তরুণ ছিলেন।

ফাদার ইয়াং-এর বাবা ডানিয়েল ছিলেন নিউইয়র্কের অবার্ন শহরে একটি কারখানার কর্মী। এই কারখানায় কাজ পাবার পর তিনি মেরি জেনিংস-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দুইজনে মিলে একটি সুখী-সুন্দর পরিবার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাঁরা দুইজনে মিলে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। তাঁদের ঘরে তিনটি সন্তান জন্ম নেয়। চার্লস ছিলেন তাঁদের মধ্যে তৃতীয়। চার্লসের মা মেরি তাঁর চতুর্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মৃত্যুবরণ করেন, সন্তানটিও মারা যায়। তাঁর অকাল মুত্যুতে চার্লসের বাবা অসহায় হয়ে পড়েন। কারখানায় কাজ করা ও সন্তানদের লালনপালন দুই কাজ একসাথে চালিয়ে যাওয়া ডানিয়েলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে চালর্সের বাবা সন্তানদেরকে একটি অনাথ আশ্রমে রাখেন। কিছুদিন পর তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন এবং সন্তানদের তার কাছে নিয়ে আসেন।

চার্লসের বড়ো ভাই ফ্র্যাঙ্ক সেন্ট বার্নার্ড সেমিনারিতে কাজ করতেন। দুই বছর কাজ করার পর পড়াশুনার উদ্দেশ্যে তিনি অন্যত্র চলে যান। ভাইয়ের ছেড়ে দেওয়া সেমিনারির কাজটি চার্লস সাদরে গ্রহণ করলেন। এখানে তাঁর কাজ ছিল ফুট-ফরমায়েস, দারোয়ানগিরি এবং অন্যান্য ছোটোখাটো কাজকর্ম করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সময়ও তিনি ওখানে ছিলেন।

প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে চার্লস হাই স্কুলের পড়া শুরু করেন। তিনি নিউইয়র্কের সিরাকিউজে অবস্থিত দ্য মোস্ট হলি রোজারি হাই স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলটি পরিচালনা করতেন ইম্মাকুলেট হার্ট অব মেরি সংঘের সিস্টারগণ। এই ধর্মপল্লীর পালক পুরোহিত ফাদার মেহন ছিলেন খুবই দয়ালু। তিনি চার্লসকে পবিত্র ক্রুশ সংঘে যোগ দিয়ে পূর্ববঙ্গে মিশনারি কাজে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

Content added By

যাজকীয় জীবনের গঠন ও যাজকাভিষেক (পাঠ ২)

30
30

১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে, ২১ বছর বয়সে চার্লস পবিত্র ক্রুশ সেমিনারিতে প্রবেশ করেন। তখন এই সেমিনারিটিকে ক্ষুদ্র সেমিনারি বলা হতো। এটি আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্ষুদ্র একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত ছিল। চালর্সের সব ক্লাস এই নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়েই অনুষ্ঠিত হতো। ফাদার ইয়াং আর্মি চ্যাপলেইন-এর কাজ করেছিলেন। এই কর্মদায়িত্ব নিঃসন্দেহে তাঁকে প্রাণবন্ত সশস্ত্রবাহিনীর ন্যায় শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন গঠনে প্রভাবিত করেছিল। নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে তিনি একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত সেন্ট যোসেফ নভিশিয়েটে প্রবেশ করেন। প্রার্থনাশীল ও ঈশ্বরভক্ত চালর্স তাঁর নভিশিয়েট শেষ করে ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের ২ জুলাই প্রথম ব্রত গ্রহণ করেন। তাঁর ব্রতসংখ্যা ছিল চারটি: দরিদ্রতা, কৌমার্য, বাধ্যতা এবং বিদেশে বাণী প্রচার।

চার্লস তাঁর শিক্ষা ও যাজকীয় জীবনের গঠনকালে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। তাঁর পরিচালকদের বেশিরভাগই ছিলেন নামকরা ব্যক্তি এবং বিভিন্ন বিশেষ গুণে গুণান্বিত। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ফাদার টমাস ইরভিং। তিনি ছিলেন একজন অঙ্কবিশারদ ও অত্যন্ত ধৈর্যশীল মানুষ।

সেমিনারির বিগত দিনগুলো চার্লসের জন্য কঠিন ছিল বটে কিন্তু সেগুলো খুব আনন্দের মধ্য দিয়েই কেটেছে। ফাদার চার্লস যে. ইয়াং খেলাধুলা খুবই ভালোবাসতেন। শারীরিক উচ্চতা কিছুটা কম থাকায় তিনি ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলতেন না। হাই স্কুলের শুরু থেকে একেবারে যাজকীয় অভিষেকের পূর্ব পর্যন্ত তিনি খেলেছেন টেনিস। খেলাধুলায় তিনি ছিলেন যেমন সক্রিয় তেমনি কাজেকর্মেও ছিলেন সমপরিমাণ সক্রিয়। একারণেই দেহে তিনি অফুরান শক্তি পেতেন এবং তাঁর দৈহিক গঠনও যথেষ্ট সুঠাম ছিল। যারা তাঁকে আগে কখনো দেখেনি তারা সবসময় তাঁকে তাঁর সঠিক বয়সের চাইতে অনেক কমবয়সী মনে করত। এভাবে যখনই কেউ তাঁকে বলত, তাঁর বয়স সঠিক বয়সের চাইতে কম মনে হয় তখন তিনি বলতেন: "আমি তো সবসময়ই ইয়াং"।

চার্লস মিশনারি হয়ে বিদেশে যাবেন, এই চিন্তা সেমিনারি জীবনের প্রস্তুতিকালে সর্বদা তাঁর মন জুড়ে থাকত। তাই তিনি অনবরত চেষ্টা করতেন নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন ও নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করার। এভাবে তিনি সবজান্তা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বাগানে শাকসব্জি লাগানো থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, পাইপলাইন মেরামত থেকে শুরু করে দালানে ইট বসানো, মিত্রিকাজ থেকে শুরু করে প্রাথমিক চিকিৎসা পর্যন্ত সবকিছুই একটু একটু করে জানার চেষ্টা করেছেন। সেমিনার জীবনেও তিনি সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে এবং মাঝে মধ্যে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সেমিনারি অতিথি বক্তার-বক্তব্য শুনতে পেলে ভীষণ আনন্দ উপভোগ করতেন। যেসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ভবিষ্যৎ পুরোহিত হিসেবে উপকারে আসবে এমনসব প্রোগ্রামে তিনি অংশগ্রহণ করতেন।

চার্লস ইয়াং-কে ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে ওয়াশিংটন ডি.সিতে অবস্থিত ফরেন মিশন সেমিনারিতে পাঠানো হয়। ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৪ জুন একটি অসম্ভব স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছিল। নটর ডেম বিশ্ববিদ্যাদলয় ক্যাম্পাসে সেদিন চার্লস ইয়াং তাঁর সতীর্থদের সাথে মিলে যাজকপদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এরপর তিনি সিরাকিউজে ফিরে গিয়েছিলেন; সেখানে তিনি তাঁর ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ধন্যবাদের খ্রিষ্টযাগটি উৎসর্গ করেছিলেন।

১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে যাজক হয়ে ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং, সিএসসি ঐ বছরেরই অক্টোবর মাসে মিশনারি কাজের জন্য পূর্ববঙ্গের উদ্দেশ্যে মাতৃভূমি ত্যাগ করেন। পূর্ববঙ্গের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পূর্বে ফাদার ইয়াং তিন মাস সময় পেয়েছিলেন। ঐ সময়টুক তিনি ব্যয় করেছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত মিশনারিদের জন্য আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে। অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখে তাঁরা কয়েকজন মিলে পূর্ববঙ্গের জন্য স্বদেশভূমি ত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের দলে নটর ডেম কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ফাদার জন হ্যারিংটনও ছিলেন। তাঁদের দলটি নিউইয়র্ক থেকে সামুদ্রিক জাহাজে করে রওনা দেন। ইতালির নেপল্স ও রোম এবং পরে বন্ধে ও কলকাতা হয়ে ঢাকায় পৌঁছেন ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর।

Content added By

সমবায় ঋণদান সমিতি প্রতিষ্ঠায় ফাদার ইয়াং (পাঠ ৩)

27
27

ফাদার ইয়াং পৃথিবীর ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) মতো একটি দরিদ্র দেশে কাজ করতে এসেছেন। তিনি ময়মনসিংহ এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মানুষকে দরিদ্রতার হাত থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি বহু চিন্তাভাবনা করেছেন ও নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করেছেন। অবশেষে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, সমবায় ঋণদান সমিতির দ্বারাই এই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। তিনি মানুষকে নগদ টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করার ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন না। এধরনের কাজ তিনি পছন্দও করতেন না। এর চাইতে বরং মানুষকে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সহায়তা করাকেই সবচেয়ে উপকারী সাহায্য বলে গণ্য করতেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল: প্রত্যয়, স্থির লক্ষ্য, কঠোর শ্রম-সাধনা এবং বলিষ্ঠ অন্তর্দৃষ্টি থাকলে যে-কোনো মানুষের পক্ষে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। তাই তিনি এবিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করার চিন্তাভাবনা করছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে কো-অপারেটিভ কাজে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন। এই বিষয়ে নিজের মধ্যে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নেওয়ার পর তিনি আর্চবিশপ লরেন্স গ্রেনার সিএসসি-র কাছে গেলেন। তাঁকে তিনি বোঝালেন যে, এতদিন তাঁরা ধর্মপল্লিতে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে জনগণকে সংগঠিত করার কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন তাঁরা বুঝতে পারছেন, দলীয়ভাবে জনগণের মধ্যে গতিশীলতা আনতে হবে, তাদেরকে সংঘবদ্ধ করতে হবে। এভাবে বর্তমান সমাজের গুরুতর সমস্যাবলির আবর্ত থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য দরকার বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা।

এই লক্ষ্যে ফাদার ইয়াং-এর বিপুল উৎসাহ দেখে আর্চবিশপ লরেন্স গ্রেনার ফাদার ইয়াংকে কানাডায় অবস্থিত নোভা স্কটিয়া-র অ্যান্টিগোনিশ-এ সমবায় ঋণদান সমিতির ওপর পড়াশুনা করার জন্য পাঠালেন। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪- এই দুই বছর পড়াশুনা শেষ করে তিনি দেশে ফিরলেন। এরপর তিনি বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) সমবায় ঋণদান সমিতি স্থাপনের উদ্যোগ নিলেন।

সমবায় ঋণদান সমিতি

সমবায় ঋণদান সমিতি বা ক্রেডিট ইউনিয়ন সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণা থাকা দরকার। ক্রেডিট ইউনিয়নকে বলা যেতে পারে সহৃদয়তা বা পরদুঃখকাতরতার সাথে টাকা জমা করা ও নিম্নতম পরিমাণ সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করার একটা প্রক্রিয়া। আবার এটাকে বিবেকহীন সুদখোর মহাজনদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ও বলা যেতে পারে। কেউ কেউ আবার এটাকে বলতে পারে একটি অধিকতর ভালো ও পরিপক্বতর সমাজজীবনের ভিত্তি। ফাদার ইয়াং-এর মতে, ক্রেডিট ইউনিয়ন হচ্ছে আদি খ্রীষ্টমণ্ডলীর ভক্তদের মনোভাব অনুসারে অধিকতর কল্যাণকর ও অধিকতর সম্পদশালী সমাজজীবন গঠনের ভিত্তিস্বরূপ। তিনি বলতেন, সমাজ গঠন করার অর্থ স্থানীয় মন্ডলী গড়ে তোলা। এটি স্থানীয় মণ্ডলীকে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করবে ও ধর্মপল্লীগুলোকে পরিচালনার ব্যয়ভার বহনে আত্মনির্ভরশীল করে তুলবে।

প্রথম খ্রীষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্ম

কানাডায় প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকায় ফিরে এসে ফাদার ইয়াং আর্চবিশপ হাউসে থাকতে শুরু করেন। এখান থেকে তিনি এক মিশন থেকে অন্য মিশনে যাতায়াত করে ভক্ত জনগণ ও যাজকদের প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন। এর মধ্যে দেশে আবার নানারকম দাঙ্গা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যা, খরা, ঝড়বাদল ইত্যাদি একটার পর একটা লেগেই রইল। এত কিছুর পরেও ফাদার ইয়াং নিরুৎসাহিত হননি। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলল। নেতৃবৃন্দের সাথে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতিমূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে, সকলেরই টাকার প্রয়োজন এবং পরের কাছে হাত না-বাড়িয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পরে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত হলো প্রথম ক্রেডিট ইউনিয়ন। বর্নার্ড ম্যাককার্থি ছিলেন এর প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন যোনাস রোজারিও। সমবায় ঋণদান সমিতির নাম দেওয়া হয় খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড। মন্ত্রবাণী হিসেবে তাঁরা গ্রহণ করলেন ফাদার ইয়াং-এর একটি কথা: "দয়ার কাজের জন্য নয়, লাভের জন্যও নয়, বরং সেবার জন্য।”

ক্রেডিট ইউনিয়নকে তাঁরা রেজিস্ট্রিকৃত করেন। রেজিস্ট্রি নম্বর ছিল ৪২। শুরুতে সদস্যসংখ্যা ছিল ৬০ জন এবং বছরের শেষান্তে গিয়ে এর সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ১১০। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছিল:
ক) সদস্যদের মধ্যে মিতব্যয়িতার মনোভাব জন্মান;
খ) সদস্যদের মধ্যে উৎপাদনশীল ও দূরদর্শী (প্রভিডেন্ট) উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়ার জন্য তহবিল গঠন;
গ) সদস্যদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল ও পারস্পরিক উপকার সাধনের মনোভাব বপন এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন।

প্রথম ক্রেডিট ইউনিয়নটি খুব ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেতে লাগল। ১৯৫৯ খ্রীষ্টাব্দে এর সদস্যসংখ্যা ছিল ২৩৭জন। ইউনিয়নের দশম বার্ষিকীতে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭৬জনে। শহরের বেশিরভাগ জনগণেরই মূল বাসস্থান কোনো না কোনো গ্রামে। ছুটিতে তারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ক্রেডিট ইউনিয়ন ও এর কৃতকার্যতার কথা বর্ণনা করতেন। এর ফলে প্রতিটি মিশনেই ক্রেডিট ইউনিয়ন দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।

নিধন ডি' রোজারিও সমবায় খবর-এর তৃতীয় সংখ্যায় লিখেছিলেন যে, কেরানি, গৃহিণী, বাবুর্চি, নার্স ও শিক্ষার্থী ক্রেডিট ইউনিয়ন কো-অপারেটিভে যোগ দিয়ে অনেকভাবে উপকৃত হচ্ছে। তাঁরা এর যথাযথ পরিচালনার ওপর বিশ্বাস ও আস্থার শিকড় গাড়তে সক্ষম হয়েছে।

ফাদার ইয়াং-এর দূরদর্শী চিন্তার আরেকটি যুগান্তকারী ফসল হলো 'দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ।' এটাকে সংক্ষেপে বলা হয় কাল্ব। এটি ক্রেডিট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংগঠন এবং এর গঠনকাল হলো ১৯৭৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি। বর্তমানে এর কর্মপরিধি সারা বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের মাঝে।

Content added By

দারিদ্র্য দূরীকরণে ফাদার ইয়াং-এর ভূমিকা (পাঠ ৪)

18
18

ফাদার ইয়াং এদেশের মাটি ও মানুষকে ভীষণ ভালোবেসে ফেললেন। এদেশের দরিদ্র মানুষের কান্না ফাদার ইয়াং-এর হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। কারণ দরিদ্র ও কষ্টভোগী মানুষের মাঝেই তিনি খ্রীষ্টকে দেখতেন। মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই খ্রীষ্টকে সেবা করার ব্রত নিয়েছিলেন তিনি। তাই মানুষকে কীভাবে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যায় তা নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকলেন। তবে তিনি খুবই নীতিবান মানুষ ছিলেন। তাঁর গভীর বিশ্বাস ছিল যে, ভিক্ষা দিয়ে মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। মানুষকে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সাহায্য করার মধ্য দিয়েই তাদের প্রকৃত সাহায্য করা হয়। তাই তিনি এদেশের মানুষের দারিদ্রতা দূর করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

(ক) ধর্মপল্লি পর্যায়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রচেষ্টা: ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং বর্তমান ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বাঐবাদা (মরিয়মনগর), বিড়ইডাকুনী, বারমারী, রাণীখং ইত্যাদি অঞ্চলে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি সেখানে মানুষকে সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ঐসব অঞ্চলের দরিদ্র জনগণের জন্য ধানব্যাংক পরিচালনা করেছেন। ১৯৬৪ খ্রীষ্টাব্দে ঐসব অঞ্চলের অসহায় মানুষদের ওপর হয়রানি, নির্যাতন ও লুটপাট চালানো হয়েছিল। তিনি সেগুলোর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। অসীম সাহস ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি দরিদ্র মানুষকে নিজ নিজ বাসস্থানে শান্তিতে বসবাস করতে সহযোগিতা করেছেন। তিনি তাদের অভাব মোকাবেলা করার জন্য কৃষিজীবী মানুষকে ফসলের বীজ, গৃহপালিত পশু ও আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। এভাবে তিনি অভাবী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

(খ) কারিতাস প্রতিষ্ঠা: বর্তমান কারিতাস বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠার বহু পূর্বে ফাদার ইয়াং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কারিতাস শুরু করেছিলেন। এই কারিতাস ছিল রোমের আন্তর্জাতিক কারিতাসের অধীনে। ফাদার ইয়াং পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন ধর্মপল্লিতে কারিতাসের যাত্রা বিস্তৃত করছিলেন। এ-সময়ের কারিতাস ধর্মপল্লি পর্যায়ে সীমিত আকারে মাত্র গুটিকয়েক প্রকল্প পরিচালনা করত। রোম থেকে কিছু আর্থিক মঞ্জুরি দেওয়া হতো। রোমের আর্থিক সাহায্যের আশায় না থেকে ধর্মপল্লির স্থানীয় জনগণকেও আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে অনুপ্রাণিত করা হতো। এই তহবিলের অর্থ প্রধানত ব্যবহার করা হতো কষ্টকর বা দুর্যোগমূলক পরিস্থিতি ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে।

(গ) কোর প্রতিষ্ঠায় ফাদার ইয়াং-এর অবদান: ১৯৭০ খ্রীষ্টব্দের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘটেছিল এক প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাস। এর ফলে অগণিত মানুষ মারা গিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ স্বজনহারা, গৃহহারা ও ফসলহারা হয়েছিল। বহু বছর পর এই সময় ফাদার ইয়াং ছুটি কাটাতে নিজ দেশে গিয়েছিলেন।

এক মাস ছুটি কাটাতে না কাটাতেই বিশপ গাঙ্গুলি তাঁকে এক জরুরি তারবার্তা পাঠিয়ে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সংবাদ দিলেন ও অতি সত্বর ফিরে এসে ত্রাণকার্যে যোগ দিতে বললেন। তিনি অনতিবিলম্বে ফিরে আসেন। এসেই অসহায় মানুষের সাহায্যে নিবেদিত হয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের বিশপ যোয়াকিম রোজারিও, সিএসসি ও ফাদার বেঞ্জামিন লাবে, সিএসসি-র সাথে একাত্ম হয়ে তিনি 'কোর' নামক ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংস্থা স্থাপন করেন ও ত্রাণকাজ শুরু করেন। এই ক্ষতির রেশ শেষ না-হতেই ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের কল্যাণে ও পূর্ণগঠন কাজে ফাদার ইয়াং কোরের পরিচালক ও অন্য কর্মীদের সাথে এক হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এই কোর পরে কারিতাস বাংলাদেশ নাম নিয়ে অদ্যাবধি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে দীনদরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

(ঘ) এনএফপি প্রতিষ্ঠায় ফাদার ইয়ং: কর্মপাগল বিচক্ষণ পরিকল্পনাকারী ফাদার ইয়াং বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে নিবেদিত হয়ে কাজ করেছেন। তিনি প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে জনসংখ্যাকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। পুরো কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে ফাদার ইয়াংকে সহযোগিতা করেছেন সিস্টার ইমেল্ডা এসএমআরএ। ১৯৮৩ খ্রীষ্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে এনএফপির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে কারিতাস এটি বাংলাদেশ-এর একটি প্রকল্প। কমিউনিটি হেলথ অ্যান্ড ন্যাচারাল 'ফ্যামিলি প্ল্যানিং' দেশের মানুষের উপকারে কাজ করছে। পরিকল্পিত পরিবার গঠন করে মানুষ তার দরিদ্রতা দূর করবে-স্বর্গীয় ফাদার ইয়াং এই স্বপ্নই দেখেছিলেন।

Content added By

ফাদার চার্লস ইয়াং আজও জীবন্ত (পাঠ ৫)

24
24

ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং ইহলোক ত্যাগ করেছেন ১৯৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর। ইতোমধ্যে তাঁকে ভুলে যাওয়ার মতো অনেক বছর পার হয়েছে। কিন্তু তাঁকে মানুষ মোটেও ভুলে যায়নি। বরং তাঁকে দিনে দিনে মানুষ যেন আরও বেশি করে স্মরণ করছে। তাঁর নামে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্ম নিচ্ছে। কারিতাস, ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলন, প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা- এসব শুধু টিকেই থাকছে না, অগণিত মানুষের জীবনে এগুলো ভীষণভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলছে। ফাদারের নামের অর্থটি যেমন চিরতরুণ (ইয়াং), তেমনি তাঁর জীবনের কর্মগুলোও চিরতরুণ রয়ে গেছে। এই কর্ম দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে এবং পৌঁছে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

ফাদার ইয়াং ফাউন্ডেশন

ফাদার ইয়াং ফাউন্ডশন হলো তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানার্থে প্রতিষ্ঠিত সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৯১ খ্রীষ্টাব্দে এটি 'ফাদার ইয়াং মেমোরিয়াল ফান্ড' নামে শুরু হয় এবং ১৯৯৫ খ্রীষ্টাব্দে এটির নাম পরিবর্তন করে 'ফাদার ইয়াং ফাউন্ডেশন' রাখা হয়। এর লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ:

ক) ক্রেডিট ইউনিয়নের ধারণাটি সমাজের দরিদ্রতম ও অবহেলিত বিভিন্ন দলের কাছে বিস্তার করার যথাযথ সহায়তা পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা;
খ) ক্রেডিট ইউনিয়নের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া সক্রিয়ভাবে চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা;
গ) ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠতে সহায়তা করা; এবং
ঘ) শ্রেষ্ঠ ক্রেডিট ইউনিয়ন, শ্রেষ্ঠ কো-অপারেটর ও শ্রেষ্ঠ কর্মীদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা ও প্রকাশ্যে পুরস্কৃত করা।

আরও পদক্ষেপ নেওয়া হয় যে,

ঙ) বাংলাদেশের সকল ক্রেডিট ইউনিয়ন ফাদার ইয়াংকে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করবে।
চ) তেজগাঁও কবরস্থানে ফাদার ইয়াং-এর কবরটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে সংরক্ষণ করা হবে।
ছ) দেশে ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোকে তাদের কার্যালয় বা হলঘরের নাম ফাদার ইয়াং-এর নামানুসারে রাখার জন্য উৎসাহিত করা হবে।

ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রথম প্রেসিডেন্ট বার্নার্ড এল. ম্যাককার্থী লিখেছিলেন:

যে পনের জন 'কুলিকে' ক্রেডিট ইউনিয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্দেশ্যে মাটি কাটার জন্য ডেকে একত্রিত করা হয়েছিল, আমাকে তাদের সর্দারের ভূমিকা পালন করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে আজ খুবই তৃপ্তি অনুভব করছি। সেই বিস্ময়কর মানুষটি অর্থাৎ শ্রদ্ধেয় ফাদার চার্লস ইয়াং, সিএসসি আমাদের হৃদয়-ক্ষেত্রের মাটিতে যে ধারণার বীজ বপন করেছিলেন সেটার থেকে একটা ইউনিয়ন গড়ে তোলা আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জপূর্ণ ছিল। ভিত্তিপ্রস্তরের জন্য গর্ত খনন করাও সহজ কাজ ছিল না। তথাপি আমাদের জনগণের মধ্যে গভীর বিশ্বাস ও সেবার পর সেবা, এরপর আরও সেবা-এভাবে আমরা সুবৃহৎ অট্টালিকাটির মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য মজবুত চরণগুলো দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা, প্রবর্তকরা, আজ আপনাদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছি কারণ আপনারা ক্রেডিট ইউনিয়নকে জীবিত রাখার ও ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠার কাজটি স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

Content added By

অনুশীলনী

23
23
শূন্যস্থান পূরণ করো।

১. ইয়াংদের পরিবারের আদর্শবাণী হচ্ছে ________ ।
২. ইয়াং ______ খুব ভালোবাসতেন।
৩. _____ গঠন করার অর্থ স্থানীয় মন্ডলী গঠন করো।

পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশের মিল করো।

বাম পাশডান পাশ

১. নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষে

২. ফাদার চার্লস ইয়াং

৩. সমাজ গঠন করার অর্থ

৪. দরিদ্র ও কষ্টভোগী মানুষের মাঝেই

৫. পরিকল্পিত পরিবার গঠনে

  • খেলাধুলা খুব ভালোবাসতেন
  • তিনি খ্রীষ্টকে দেখতেন
  • সেন্ট যোসেফ লভিশিয়েট প্রবেশ করেন
  • তাঁর বৈশিষ্ট্য ছিল
  • স্থানীয় মণ্ডলী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. ফাদার ইয়াং তাঁর সারা জীবনে কাজে কেমন ছিলেন?
ক. বিনয়ী
খ. উৎসাহী
গ. তরুণ
ঘ. অনুপ্রাণিত

২. ফাদার ইয়াং-এর মতে সমাজ গঠন করার অর্থ?
ক. স্থানীয় সমাজ গড়ে তোলা
খ. স্থানীয় সম্প্রদায় গড়ে তোলা
গ. স্থানীয় মণ্ডলী গড়ে তোলা
ঘ. স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলা

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
রজত গণিতে দুর্বল। তার শ্রেণিতে অন্যের খাতা দেখে লেখার অভ্যাস। তার বন্ধু সমির এই অবস্থা দেখে রজতকে একদিন ডেকে গণিতের নিয়ম বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। এরপর থেকে রজতকে যে কোনো অঙ্ক দেওয়া হয়, তাই তার কাছে সহজ মনে হয়। গণিতের প্রতি ভীতি দূর হয়।
৩. সমিরের কাজে ইয়াং-এর যে গুণটি প্রকাশ পায় তা হলো-
i. অজ্ঞতা দূর করা
ii. সহযোগিতা করা
iii. প্রকৃতই সাহায্য করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. i, ii ও iii

৪. সমিরের উক্ত কাজে রজত হয়ে উঠতে পারে
ক. আত্মনির্ভরশীল
খ. সাহসী
গ. সংযমী
ঘ. বুদ্ধিদীপ্ত

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. কলিন্স পরিবারের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন। গত বছর টর্নেডোর পর কলিন্স কাপড়, খাবার, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে দুর্গম এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাঁর উপস্থিতি অসহায় মানুষগুলোকে বেঁচে থাকার আশা যোগায়। কলিন্স ঐ গ্রামের শিক্ষার উন্নয়নেও এগিয়ে আসেন। তিনি ভেঙে যাওয়া স্কুল-কলেজগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেন।

ক. চার্লসের বড় ভাই কোথায় কাজ করতেন?
খ. ফাদার ইয়াং সারা জীবনই তরুণ-এ বাক্যটির মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ফাদার ইয়াং-এর কোন সংস্থার কার্যক্রমের দ্বারা কলিন্স অনুপ্রাণিত হয়েছিল- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ফাদার ইয়াং ও কলিন্সের কার্যক্রমের তুলনামূলক আলোচনা করো।

২. পাহাড়তলিতে অনিমা খুব ধর্মভীরু ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নারী, যিনি মানুষকে মিতব্যয়ী হতে ও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেন। তিনি ঐ এলাকার বিভিন্ন মানুষের আয়ের অতিরিক্ত টাকা তাঁর কাছে জমা রেখে একটি সমিতি গঠন করেন, যেখান থেকে তাদের সদস্যদের প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করেন। ফলে অনেক লোক তাদের প্রয়োজনের সময় আর্থিক সাহায্য পেয়ে লাভবান হয়।
ক. কাল্ব কোন সংস্থার সংক্ষিপ্ত রূপ?
খ. কারিতাস বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের কাজ করে?
গ. ফাদার ইয়াং-এর কোন কাজের শিক্ষা অনিমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল?
ঘ. 'অনিমার কাজ ঐ এলাকায় দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে'- তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মূল্যায়ন করো।

সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন

১. ইয়াং শব্দের অর্থ কী?
২. চার্লস শিশুকালে কোথায় ছিলেন?
৩. চার্লস তার নভিশিয়েট কবে শেষ করেন?
8. তিনি কয়টি ব্রত নিয়েছিলেন? সেগুলো কী কী?
৫. কোথায় চার্লস ইয়াং যাজক পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন?

বর্ণনামূলক প্রশ্ন

১. সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠায় ফাদার ইয়াং-এর অবদান আলোচনা করো।
২. কোন বিষয়টি সামনে রেখে ফাদার ইয়াং খ্রীষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়ন স্থাপন করেন?
৩. ফাদার

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;